Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

খাদ্য নিরাপত্তায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের সম্ভাবনা ও করণীয়

খাদ্য নিরাপত্তায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের সম্ভাবনা ও করণীয়
ড. মোঃ নুর আলম চৌধুরী

বাংলাদেশে পেঁয়াজ একটি উচ্চমানের গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী মসলা ফসল। পেঁয়াজ কন্দের আকার আকৃতি স্বাদ, গন্ধ, পুষ্টিমান, পরিবহণ সুবিধা এবং সংরক্ষণ গুণের কারণে দ্রুত এর চাষাবাদ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে অধিকাংশ দেশেই কম বেশি পেঁয়াজের আবাদ পরিলক্ষিত হলেও চীন (২৫%) এবং ভারতে (২৩%) বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। খাদ্য পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তার বিবেচনায় পেঁয়াজের গুরুত্ব অপরিসীম।   পুষ্টিমানের দিক থেকে ইহা যথেষ্ট পুষ্টিসমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযোগী পেঁয়াজে ৯.৩৪ গ্রাম শ্বেতসার, ৪.২৪ গ্রাম চিনি, ১.৭ গ্রাম আঁশ, .০১ গ্রাম চর্বি, ১.১ গ্রাম আমিষ এবং যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। এ ছাড়াও পেঁয়াজে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ফাইটোকেমিক্যালস, পলিফেনল, হলুদ পেঁয়াজের ফ্লাভেনয়েড, লাল পেঁয়াজের এন্থোসায়ানিন এবং আরো ২৫ ধরনের বিভিন্ন জটিল যৌগ যা আমাদের নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ ও উপশমে সহায়তা করে। পেঁয়াজ এমন একটি ফসল যা কৃষক তার ঘরে রেখে প্রয়োজনে বাজোরে বিক্রি করে পরিবারের অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদনের চাহিদা পূরণ করে। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকদের পারিবারিক আয় বৃদ্ধিসহ পেঁয়াজের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব। নিম্নে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের সম্ভাবনা, করণীয় ও এর চাষাবাদের আধুনিক কলাকৌশল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের সম্ভাবনা
আমাদের দেশে পেঁয়াজ একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। আমাদের দেশে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ২.৩৮ লাখ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৫.৬ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়। যার গড় ফলন ১০.৭৬ টন/হেক্টর (কৃষি ডাইরি, ২০২১)। উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় শতভাগ পেঁয়াজই শীতকালে উৎপাদিত হয়। শীতকালে তিন পদ্ধতিতে মূলত পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়ে থাকে যথা : চারা থেকে পেঁয়াজ, মুড়িকাটা পেঁয়াজ এবং সরাসরি বীজ বপন করে কন্দ উৎপাদন। উৎপাদন ও আমদানি বিবেচনায় এদেশের বার্ষিক পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩৫ লাখ টন। এ ৩৫ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে মোট দেশজ উৎপাদন ২৩-২৪ লাখ টন হলেও সংগ্রহোত্তর ২৫-৩০% অপচয়ের ফলে ব্যবহার উপযোগী উৎপাদন দাঁড়ায় ১৭-১৮ লাখ টন। প্রতি বছর প্রায় ১১-১২ লাখ টন পেঁয়াজে ঘাটতি বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়ে থাকে। ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে যথাক্রমে প্রায় ১১ ও ১২ লাখ টন। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষাবাদ এবং এর আওতায় জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করে উল্লেখিত ঘাটতি সহজেই মেটানো সম্ভব। কারণ শীতকালীন পেঁয়াজ শুধু শীতকালেই চাষাবাদ করা সম্ভব। কিন্তু  গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ সারা বছর চাষ করা যায়, (রবি মৌসুমে এবং খরিপ-১ ও   খরিপ-২)। তবে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য উঁচু এবং মধ্যম উঁচু জমির প্রয়োজন। কারণ পেঁয়াজ দাঁড়ানো পানি মোটেও সহ্য করতে পারে না। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে জমিতে পানি জমে থাকলে পেঁয়াজের চারা বা কন্দ পচে যায়। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের জন্য বেলে     দো-আঁশ থেকে দো-আঁশ মাটি উপযুক্ত। মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া থেকে বারি পেঁয়াজ-৫ নামে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের জাত উদ্ভাবন করা হয়। আমাদের দেশে পাহাড়ি এলাকায় সমতল ভূমি, ছাদ বাগানে, বসতবাড়িসহ সাথী/আন্তঃফসল হিসাবে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে সম্ভাবনা আছে। নিম্নে আলোকপাত করা হলো।
পাহাড়ি এলাকায়
পাহাড়ি এলাকায় মোট জমির প্রায় ০.০২৪ হেক্টর (৬ শতাংশ) সমতল জমি বিদ্যমান। এই সমতল জমিতে সহজেই আমরা গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করতে পারি। তাছাড়া লেট খরিপে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে হেক্টরপ্রতি ৩০-৩৫ টন ফলন পাওয়া সম্ভব। পাহাড়ি এলাকায় গ্রীষ্ম/বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হওয়া সত্ত্বেও পাহাড়ি জমি উঁচু হওয়ায় পানি দ্রুত লিচিং হয়ে পানি নিচে চলে যায়। ফলে পেঁয়াজের চারা বা কন্দ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। পাহাড়ে সীমিত আকারে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে মসলা জাতীয় ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায়   পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এবং চট্টগ্রাম পার্বত্য জেলা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষাবাদ সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।    
ইক্ষুর সাথে সাথী/আন্তঃফসল হিসাবে
ইক্ষু একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল। ইক্ষু লাগানো থেকে কর্তন করা পর্যন্ত প্রায় ১৪ মাস সময় লাগে। এই সময়ে আমরা সহজেই ইক্ষুর সাথে সাথী/আন্তঃফসল ফসল হিসাবে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করতে পারি। বাংলাদেশে প্রায় (৫.৫১ লাখ) হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়ে থাকে (বিবিএস, ২০১৯)। ইক্ষু সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে নালা করে এক/দুই সারিতে রোপণ করা হয়। রোপণ পরবর্তীতে প্রায় চার মাস (জানুয়ারি-এপ্রিল) সময় আখের অংকুরোদগম তথা দৈহিক বৃদ্ধি অত্যন্ত ধীরগতিতে হয়। এ সময় ১ বা ২ সারি ইক্ষুর মাঝের ফাঁকা স্থানটিতে সহজেই আন্তঃ/সাথী ফসল হিসাবে স্বল্পমেয়াদি  গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করা সম্ভব। চারা লাগানোর ৬৫-৭০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়। কাজেই ইক্ষু রোপণের পর থেকে মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। একজোড়া ইক্ষুর সারির দুই লাইনের মাঝে ৭০ সেমি. দূরত্ব এবং দুই জোড়া ইক্ষুর সারির মাঝে ১৩০ সেমি. দূরত্ব রাখতে হয়। কাজেই এক সারি বা দুই সারির মাঝে ফাঁকা জায়গায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটানোসহ আখ চাষির অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব।
বসতবাড়িতে
এ বসতবাড়ির আশেপাশে মাত্র ৫ মি.ঢ২মি. (১০ হাতঢ৪ হাত) পরিমাণ জায়গা থাকলে একই জমিতে ফেব্রুয়ারি (মাঘ) মাসে চারা রোপণ করে ১৫-২০ কেজি, জুন (জ্যৈষ্ঠ) মাসে চারা রোপণ করে ১৫-২০ কেজি এবং সেপ্টেম্বর মাসে চারা রোপণ করে ২০-২৫ কেজি ফলন পাওয়া যায় এ হিসাবে ৫ মি.ঢ২ মি. জমিতে সারা বছর বারি পেঁয়াজ ৫ জাতের চাষ করে সর্বমোট ৬০-৬৫ কেজি ফলন পাওয়া যায়। একটি পরিবারের ৪-৫ জন সদস্যর জন্য মাসে গড়ে ৪ কেজি পেঁয়াজ কন্দের প্রয়োজন হয়। সে হিসাবে একটি পরিবারের বার্ষিক পেঁয়াজের চাহিদা ৪৮ কেজি। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের প্রতিটি পরিবার নিজেদের বার্ষিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদিত পেঁয়াজ বিক্রি করেও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে।
ছাদ বাগানে
রুফটপ গার্ডেনিং বা ছাদ কৃষি আমাদের দেশে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে সিটি কর্পোরেশন এলাকাসহ জেলা ও উপজেলায় ছাদ কৃষির প্রসার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউনাইটেড নেশনের তথ্য অনুযায়ী সারা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫৪% লোক শহর এলাকায় বসবাস করে। শহর এলাকায় এই বসবাসের পরিমাণ ২০৫০ সালের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে প্রায় ৬৬ শতাংশ (United Nation, 2014) ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে ছাদ বাগানে পেঁয়াজ চাষের মাধ্যমে পেঁয়াজের ঘাটতি অল্প পরিসরে হলেও পূরণ করা সম্ভব। তবে এজন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী ছাদ বাগানকে শাকসবজি, ফলমূল, মসলাজাতীয় ফসল এবং ফুল চাষের জন্য ব্যবহার করা। ছাদ বাগান, ছাদের তাপমাত্রা হ্রাসসহ পারিপাশির্^ক আবহাওয়াকে ঠাণ্ডা রাখে। ইহা পরিবেশে বিদ্যমান বিষাক্ত কার্বন শোষণসহ শব্দ দূষণ হ্রাস করে। ছাদ বাগানে ১ মিটারঢ০.৬ মিটার আকারের ৪টি ট্রেতে ৭০-৮০ দিন পর ২.৫-৩.০ কেজি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন করা সম্ভব যা   ৪-৫ সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের মাসিক পারিবারিক চাহিদার চাহিদা মেটানো সম্ভব।
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজসহ পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানো এবং উৎপাদন স্থিতিশীল রাখার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন : ১) যথাসময়ে উন্নতজাতের ও গুণগতমানের বীজ কৃষকপর্যায়ে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বারি, বিএডিসিও ডিএই এর সমন্বয়ে কৃষকপর্যায়ে গুণগতমান সম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। ২) বিএডিসির গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন ও বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। বীজ উৎপাদনের জন্য জাত নির্বাচনে প্রাতিষ্ঠানিক লাভের চেয়ে কৃষকের সুবিধা বিবেচনা করা বেশি প্রয়োজন। ৩) পতিত জমি ব্যবহার ও আন্তঃফসল (আখ, মুখিকচু, আদা, হলুদ, মরিচ এর সাথে) হিসেবে, ছাদ বাগানে। ৪) বসতবাড়িতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজচাষের এলাকা বাড়ানো যেতে পারে। ৫) সময়মতো অল্পসুদে (৪%) মসলা ফসল চাষের ওপর ঋণ সুবিধা প্রদান এবং ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি ও ঝামেলমুক্তভাবে ঋণ প্রাপ্তি সহজতর করা আবশ্যক। ৬) পেঁয়াজ সংগ্রহ মৌসুমে পেঁয়াজে আমদানি বন্ধ রেখে পেঁয়াজ চাষিদের স্বার্থ রক্ষা তথা পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। ৭) পেঁয়াজ সংরক্ষণে টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণায় বিনিয়োগসহ পেঁয়াজ চাষে উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণে কৃষক/কৃষিকর্মীসহ পেঁয়াজ উৎপাদনের সাথে জড়িত সকলকে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। পেঁয়াজের জমি চাষ ও শ্রমিক খরচ কমানোর জন্য হাইস্পিড রোটারি টিলার ও পাওয়ারটিলার চালিত বীজ বপনযন্ত্র ব্যবহার উৎসাহিত করা যেতে পারে। ৮) পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য উৎপাদন (পাবনা, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী) এলাকায় বিশেষ ধরনের কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ করতে হবে, যাতে ঘাটতি মৌসুমে উক্ত সংরক্ষিত পেঁয়াজ সরবরাহ করা যায়। ৯) পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। য়

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা কেন্দ্র, শিবগঞ্জ, বগুড়া। মোবা: ০১৭১১২৪৬৩৫২, মেইল: dmnalam@yahoo.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon